শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল থাকায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
এরফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া রোগীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে, তেমনি ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগে অধ্যয়নরত আড়াইশত শিক্ষার্থীর মাঝে শেষ দুই বর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্খিত শিক্ষা গ্রহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে প্রয়োজনীয় এসব যন্ত্রপাতি দ্রুত মেরামত করে ইউনিটের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন।
হাসপাতালের ডেন্টাল ওয়ার্ড বা বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১২ সালে স্বতন্ত্র ডেন্টাল বিভাগের কার্যক্রম ও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। এরপর হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগ অর্থাৎ যেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয় সেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় পরের বছর আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ডেন্টাল বিভাগটিকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। যারমধ্যে স্ক্যালিংসহ ১২ টির মতো ডেন্টাল চেয়ার বা ইউনিট, এক্সরে মেশিনসহ আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ছিলো। তবে সরবরাহকৃত সেইসব যন্ত্রাপাতি নিয়ে শুরু থেকেই ছিলো দায়িত্বরতদের দ্বিমত।
ডেন্টাল চেয়ারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইংল্যান্ডের চাওয়া হলেও, জাপানের নামে চাইনিজ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার অভিযোগ ওঠে। তারপর শিক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য সেসব দিয়েই হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ডেন্টাল বিভাগ এগিয়ে চলে। তবে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই একাধিকবার স্ক্যালিংসহ ডেন্টাল চেয়ারগুলো নষ্ট হয়ে বিকল হয়ে যায়। উদ্যোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেরামত করিয়েও তা বেশিদিন চালনা করতে পারেনি।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ রুবেল বলেন, গত ১ মাসের বেশি সময় ধরে ডেন্টাল বিভাগের স্ক্যালিংসহ ডেন্টাল চেয়ারগুলো বিকল হতে শুরু করে। সর্বোশেষ ভালো অবস্থায় থাকা ২ ডেন্টাল চেয়ার গত ২ সপ্তাহ আগে বিকল হয়ে পড়ে। এক্সরে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে পরে রয়েছে বহুদিন ধরে। এরপর থেকে পুরাতন ২৮ ও নতুন ১২ জনসহ মোট ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারছে না। একইসাথে বিভাগের ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষার্থীরাও ব্যবহারিক কিছু শিখতে পারছে না।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পল্লব সরকার জানান, যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় বর্তমানে ওয়ার্ডটিতে কোনো রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না, ফলে বিভাগের দায়িত্বে থাকা ৫ চিকিৎসকসহ সেবিকা ও কর্মচারীরাও অলস সময় পার করছে। তবে সবথেকে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছি আমরা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। আর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা ইন্টার্নরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। তবে এটি কর্মবিরতি বলা যাবেনা কারণ যন্ত্রপাতি সচল রেখে তো আমরা কাজ বন্ধ রাখিনি।
ওয়ার্ডের দায়িত্বরতর জানান, শনিবার থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় নতুন রোগীও ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরে ওয়ার্ডটিতে মাত্র ১ জন রোগী রয়েছেন। তাকে ঘিরে ওয়ার্ডে থাকা চিকিৎসক, সেবক-কর্মচারীদের সকলেরই ব্যস্ততা। এদিকে প্রায় ২ মাস ধরে এক্সরে মেশিন বিকল থাকায় সেই কক্ষটিই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে ডেন্টাল বিভাগের দায়িত্বরত রেজিষ্ট্রার ডাঃ শাহরিয়ার বলেন, ডেন্টাল বিভাগের সবগুলো চেয়ার বা ইউনিট বিকল হয়ে পড়ায় গত শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কার্যক্রম অর্থাৎ কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা জানায়। এরপর তারা কাজকর্মও বন্ধ করে দেয়। আবার যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় কোনো রোগীকে আমরাও ভর্তি নিতে পারছি না। বহিঃর্বিভাগকে সে ধরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।